No title

হামাসের হাতে নাহাল ওজ ঘাঁটির পতন


২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের নাহাল ওজ সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করে হামাস। যা ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এবং দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক বিশাল ধাক্কা বলে বিবেচিত। 

ইসরাইলের নাহাল ওজ সামরিক ঘাঁটি। যা গাজা সীমান্ত থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঘাঁটিটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে হামাসের আক্রমণের মুখোমুখি হয়। 

এর আগে ঘাঁটিটির কয়েকজন সৈনিক সীমান্তে সন্দেহজনক কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। বিশেষ করে ইসরাইলি বাহিনীর সীমান্ত পর্যবেক্ষণকারী দল, যারা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তারা বেশ কয়েকদিন ধরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি লক্ষ্য করেছিলেন। তবে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেসবকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই জানা গেছে।

বিবিসি জানায় যে, হামাসের ওই হামলার সময় অনেক ইসরাইলি সৈন্য অরক্ষিত ছিলেন এবং তাদের নজরদারি চালানোর কিছু সরঞ্জামও নষ্ট বা অকেজো ছিল। বিশেষ করে নাহাল ওজ ঘাঁটির একটি বেলুন নজরদারি ব্যবস্থা কাজ করছিল না তখন। 

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানায়, বেলুনটি গত ৭ অক্টোবরের আগেই নষ্ট হয়ে যায় এবং সেটি ঠিক করার চেষ্টা পরবর্তীতে করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

সেদিন হামাসের আক্রমণ শুরু হয় ভোর ৬টা ২০ মিনিটের দিকে। প্রথমে রকেট হামলা চালিয়ে ঘাঁটির দিকে এগিয়ে আসে হামাস যোদ্ধারা। ইসরাইলি বাহিনীর নজরদারি দল এটি শনাক্ত করার চেষ্টা করে। তবে হামাসের আক্রমণ এতটাই দ্রুতগতিতে ঘটে যে, ইসরাইলি সৈন্যরা তা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। 

এর ফলে সকাল ৭টার মধ্যেই হামাস যোদ্ধারা নাহাল ওজ ঘাঁটির যুদ্ধকক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এতে যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমেই আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।

প্রায় ৭০ জন হামাস যোদ্ধা নাহাল ওজ ঘাঁটিতে চারদিক থেকে আক্রমণ শুরু করে। যদিও ঘাঁটিটির ভেতর থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রতিরোধের চেষ্টা করে। তবে হামাস যোদ্ধাদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং তাদের রণকৌশল এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, তারা সহজেই ঘাঁটিটি দখল করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে ইসরাইলি বাহিনীর সাহায্য পাঠাতে দেরি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।

হামাসের এই আক্রমণে ৬০ জনেরও বেশি ইসরাইলি সৈন্য নিহত হয় এবং অনেকে বন্দি হন। হামাসের হাতে বন্দি হওয়া ইসরাইলি নারী সৈন্যদের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়, যেখানে দেখা যায় যে, অনেকেই নিহত হন এবং কয়েকজনকে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।


ঘটনার পর ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এবং সামরিক বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেছেন যে, এই ঘটনার পেছনে বড় ধরনের কৌশলগত ভুল ছিল। সীমান্ত ঘাঁটিটিতে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না এবং সৈন্যরা অরক্ষিত ছিলেন। অন্যদিকে গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরেও বিষয়টিকে অবহেলা করা হয়েছিল, যা ঘাঁটির পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ইসরাইলি বাহিনী ওইদিন সন্ধ্যা নাগাদ পুনরায় ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়। তবে ইতোমধ্যেই ঘাঁটির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়ে যায় এবং প্রায় সব সৈন্য নিহত বা বন্দি হন।  

হামাসের ওই হামলা ইসরাইলকে তার নিরাপত্তা কৌশল ও ব্যবস্থায় বড় ধরনের পুনর্মূল্যায়নের দিকে ঠেলে দেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের সেই হামলার পর ইসরাইলের জনগণ এবং সামরিক বাহিনী নিজেদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আরও কঠোর প্রশ্ন তুলতে শুরু করে।

আইডিএফ জানিয়েছে, সেই ঘটনার তদন্ত এখনও চলমান এবং এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় খোঁজা হচ্ছে। 




Post a Comment

Previous Post Next Post