নেতানিয়াহুকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলেছিলেন বাইডেন

 

নেতানিয়াহুকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলেছিলেন বাইডেন


ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘মিথ্যাবাদী’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে অভিযান শুরুর সময় বাইডেন ক্ষুব্ধ হয়ে এ কথা বলেছিলেন। মার্কিন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডের আসন্ন বইয়ের কিছু অংশে এই ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।


উডওয়ার্ডের বই ‘ওয়ার’-এ বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের বসন্তে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর সম্পর্ক ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বইটির এক অংশে বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসের এক ফোনালাপে বাইডেন নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোমার কৌশল কী, মানুষ?’ উত্তরে নেতানিয়াহু জানান, ইসরায়েলকে গাজা-মিসর সীমান্তবর্তী শহর রাফাহতে প্রবেশ করতে হবে, কারণ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মতে এটি হামাসের শেষ শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল।

তবে বাইডেন এই কৌশলের কঠোর সমালোচনা করেন ও বলেন, বিবি, তোমার কোনও কৌশল নেই।

বাইডেন আরও বলেন, নেতানিয়াহু হামাস নিয়ে চিন্তিত নন, বরং নিজের স্বার্থই তার প্রধান চিন্তা।

২০২৪ সালের মে মাসে ইসরায়েলি বাহিনী সীমিত আকারে রাফাহতে প্রবেশ করে। যদিও বাইডেনের প্রশাসন এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিল।

বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যকার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই অস্থির ছিল। দুই নেতা দশকের বেশি সময় ধরে একে অপরকে চিনলেও, ২০২২ সালে নেতানিয়াহু ডানপন্থি নেতাদের নিয়ে জোট গঠন করার পর থেকে হোয়াইট হাউজের সমালোচনার মুখে পড়েন। এছাড়া, ২০২৩ সালে নেতানিয়াহুর সরকারের বিচারিক সংস্কার পরিকল্পনা নিয়েও ওয়াশিংটন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

তবে, বাইডেন ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল সফরকারী প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি তখন ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সংহতি প্রকাশ করেন। কিন্তু এরপর থেকে নেতানিয়াহুর যুদ্ধ পরিচালনা ও জিম্মি উদ্ধারে নেতানিয়াহুর কৌশল নিয়ে উভয় নেতার মধ্যে সংঘাত বাড়তে থাকে।

ইসরায়েলের রাফাহতে প্রবেশের পর বাইডেন নেতানিয়াহুকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে মিথ্যাবাদী’। উডওয়ার্ডের বই অনুযায়ী, একান্ত আলাপে বাইডেন বলেছিলেন, ‘বিবি নেতানিয়াহু, সে খারাপ লোক। সে একজন খারাপ মানুষ।’

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইসরায়েল সিরিয়ার দামেস্কতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর দুই জেনারেলকে হত্যা করলে বাইডেন নেতানিয়াহুকে এই ঘটনায় আরও উত্তেজনা না বাড়ানোর জন্য চাপ দেন। বাইডেনের মতে, এই হামলার সীমিত প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলের জন্য সাফল্য হিসেবে ধরা যায়।

এরপর, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে বৈরুতে এক বিমান হামলায় হত্যা করে। উডওয়ার্ডের বইয়ে বলা হয়েছে, এরপর বাইডেন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে বলেন, “বিবি, তুমি কী করছ? জানো না বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলকে এখন ‘দাঙ্গাবাজ রাষ্ট্র’ হিসেবে দেখা হচ্ছে?”

শুকর ১৯৮৩ সালে বৈরুতে মার্কিন মেরিন সেনাবাহিনীর ব্যারাকের বোমা হামলায় জড়িত ছিলেন। ওই হামলায় ২৪১ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পর্কে তথ্য দিতে ৫ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।

উডওয়ার্ডের এই বইটি প্রকাশিত হলে বাইডেন-নেতানিয়াহু সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য সামনে আসবে।

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল






Post a Comment

Previous Post Next Post