অটো চালককে পুরস্কৃত করলেন সাইফ
১৬ জানুয়ারি ভোররাতে ছুরিকাঘাতের হামলায় সাইফ আলী খানকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার মত সাইফ আলী খানের বড় বড় ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো কোন কাজে লাগেনি. এমন অবস্থায় এক অপরিচিত, দয়াবান, মানবিকতার এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে ভজন সিং নামের অটোচালক দ্রুত ছুরিকাঘাতর ব্যক্তিকে হসপিটালে নিয়ে যান. অবশেষে সাইফ আলী খান সুস্থ হয়ে সেই অটোচালকের সাথে দেখা করলেন.
দুর্বৃত্তের হাতে ছয়বার ছুরিকাঘাতের শিকার হওয়ার পর সাইফ. বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টা ৩০ নাগাদ মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বাড়িতে দুর্বৃত্তরা সাইফ আলী খান কে ৬ বার ছুটি কাঘাত করে. সেই রাতে সাইফের সঙ্গে তৈমুর ছাড়া ছিল তার গৃহকর্মী হরি। অটো রিকশা চালক ভজন সিং জানান ইব্রাহিম নয়, ৮ বছরের ছোট্ট শিশু তৈমুরের সঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় বসে ছিলেন সাইফ।
অটোরিকশা চালক ভজন সিং বলেন,বান্দ্রার রাস্তায় আমি রাতের ডিউটি করছিলাম। হঠাৎ রিকশা, রিকশা শব্দ শুনতে পাই। ইউটার্ন নিয়ে বান্দ্রায় ওই বিলাসবহুল ভবনের সামনে আসি। আমি দেখতে পাই, সাদা রঙের পোশাক পরা একজনকে। যার ঘাড় ও পিঠ থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছিল। আমাকে বলেন, লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যেতে। আমি তখন তাকে ঐ মুহূর্তে বলেছিলাম যে আমি তাকে দ্রুত পৌঁছায় দিব হাসপাতালে . এবং আমি দ্রুত হাসপাতালে উদ্দেশ্যে রওনা দি কোন রকম চিন্তা-ভাবনা না করে আমার টার্গেট ছিল তার জান বাঁচানো. ভজন সিং সংবাদমাধ্যমে জানান, আমি তখনও বুঝতে পারিনি আমার অটো রিক্সায় যাত্রী ছিলেন বলিউড তারকা সাইফ আলি খান রক্তাক্ত অবস্থায়.
সেই অটোচালকের নাম ভাজন, উত্তরাখণ্ডের মানুষ ভাজন. মুম্বাইয়ের রাস্তায় দীর্ঘদিন ধরে অটো চালাচ্ছেন তিনি. সব সময় মত অটো চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ভাজন. ১৬ জানুয়ারি ভোররাতে অটো চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ভাজন হঠাৎ রক্তাক্ত অবস্থায় একজন কাতরাচ্ছেন যার নাম সাইফ. এরকম বিপদে পড়া মানুষের কথায় আগে পিছে কিছু চিন্তা না করে সেই বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যায় ভাজন. প্রথমে ভাজন সাইফ আলী খানকে চিনতে পারেনি. এমন অবস্থায় সাইফ আলী খান কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান.
লীলাবতী হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী অফিসার নীরজ উত্তমণি বলেন, সাইফ আলী খান যখন হাসপাতালে প্রবেশ করেন তখন তার পিঠে ছুরি বসানো ছিল. চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাইফের শরীরে ছয়টি আঘাত লেগেছে, এর মধ্যে একটি আঘাত মেরুদণ্ডের কাছাকাছি পিঠে রয়েছে।উনি প্রচন্ড ভাবে ভেঙে পড়েন নি, এমন কি স্ট্রেচারের শুয়েও পড়েননি, পায়ে হেঁটে হাসপাতালে ছোট ছেলের হাত ধরে হাসপাতালে ঢুকেন.
লীলাবতী হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেখানে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারে সফল হন চিকিৎসকরা. শঙ্কামুক্ত সাইফকে প্রথমে আইসিইউতে রাখা হয়। সাইফ আলী খানের অবস্থা একটু ভালো হলে তাকে আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডে স্থানান্তর করা হয়।
তবে চিকিৎসকরা জানান, শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও মেরুদণ্ডের আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল ক্ষরণ হওয়ায় ক্ষতস্থানে ঘা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে এখন। এ মুহূর্তে লীলাবতী হাসপাতালেই চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন অভিনেতা।
প্রায় পাঁচ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর বাড়ি ফিরছেন সাইফ আলী খান.
কিছুটা সুস্থ হলেও তাকে বিশ্রামে থাকতে হবে. হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার আগে অটোচালক ভাজন সিং এর সাথে দেখা করতে চাইলে সাইফ আলি খান.
ভাজন সিং ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানান,
“তারা আমাকে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে আসতে বলেছিল। আমি বলি, ঠিক আছে, পৌঁছে যাব।” কিন্তু হাসপাতালে যেতে ভাঁজম সিং একটু দেরি করে ফেলেছে. যাহোক, সবশেষে দেখা করলেন সাইফ আলী খানের সাথে ভাজন সিং.
সাইফ আলী খানের রুমে ঢোকার পর ভাজন সিং দেখলেন সাইফ আলী খানের পরিবার সহ সাইফ আলী খান সেই হাসপাতালেঅবস্থান করছেন.
সাইফের মা এবং সন্তানেরাও সেখানে উপস্থিত ছিল। তাদের তরফ থেকে অনেক সম্মান দেওয়া হয়েছে আমাকে। শুধু তাই নয়, জড়িয়ে তাকে জড়িয়ে ধরার পাশাপাশি ছবিও তোলেন ভজনের সঙ্গে।
ভজন বলেন, আজ আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো, খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ কিছুই না, শুধু দেখা করার জন্য এই আমন্ত্রণ। আমি সাইফকে বলেছি, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন, আমি আপনার জন্য প্রার্থনা করেছি, সবসময় সেই প্রার্থনা করে যাব।
পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে হামলার কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। সিটিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার দুপুরে ওই ব্যক্তি বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে থাকতে পারে। ডিসিপি দীক্ষিত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘এখনো পর্যন্ত তদন্তে আমরা এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছি, যিনি সাইফ আলী খানের বাড়িতে চুরির উদ্দেশে গিয়েছিল। ওপরে যাওয়ার জন্য ‘সৎগুরু শরণ’ নামে ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তি ভবনের সিঁড়ি ব্যবহার করে, যেখানে অভিনেতা তার পরিবারের সঙ্গে থাকেন। এরপর রাতে খান ও দুর্বৃত্তের মধ্যে লড়াই হয়। এ ঘটনায় বান্দ্রা থানায় মামলা করা হয়েছে।